বাউফলে চাকরী না করেও বেতন !

বাউফলে চাকরী না করেও বেতন !


দেলোয়ার হোসেন, বাউফল ঃ চার বছর ধরে চাকরী না করেও বেতনসহ অন্যান্য সুবিধা ভোগ করেছেন পটুয়াখালীর বাউফলের নাজিরপুর ছোট ডালিমা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাসুমা বেগম।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মাসুমা বেগম ২০১১ সালের ৪ এপ্রিল ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিক হিসাবে  যোগদান করেন। তিনি ২০১২ সালের ১ নভেম্বর এমপিও ভুক্ত হন। এরপর তিনি ২০১৮ সালের এপ্রিল মাস থেকে ২০১৯ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত ১১ মাস তিনি বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন। একপর্যায়ে তিনি ২০১৯ সালের মার্চ মাসে চাকরী ছেরে দেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটি রেজুলেশনসহ বিধি মোতাবেক সহকারী শিক্ষক মাসুমা বেগমের এমপিও কপিতে নাম কর্তনের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরে (ডিজি) পাঠান।
শিক্ষক কর্মচারী তথ্য বিবরণীতে মাসুমা বেগমের নামের সামনে লেখা “অব্যাহতি পত্র প্রদান করেছেন”এবং এমপিও কপিতে নাম কর্তন প্রক্রিয়াধিন থাকা অবস্থায় ২০২২ সালের ১৩ অক্টোবর ৪ বছর পর ওই সহকারী শিক্ষিক মাসুমা বেগম একই বিদ্যালয়ে পুনরায় যোগদান করেন। কিন্তু বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহাবুবুর রহমান ওই সহকারী শিক্ষকের ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ৫ ভাগ ইনক্রিমেন্ট সুবিধা সহ ৪ বছরের বেতন ভাতা পরিশোধ করেন।  অথচ ইনক্রিমেন্ট আদেশে বলা আছে কোন শিক্ষক যদি ইনক্রিমেন্ট কালীন সময়ে ছুটিতে থাকলেও তিনি ইনক্রিমেন্ট সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন। কিন্তু ৪ বছর চাকরি না করেও  ওই সহকারী শিক্ষক ইনক্রিমেন্ট সুবিধাসহ বেতন ভাতা দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে সহকারী শিক্ষক মাসুমা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘এটাতো বোঝার বাকি নাই যে, আমি কোথা থেকে কোথায় আসছি। সবাইতো এই লেবেলটা ঘুরে আসতে পারে না। চাকরী রিজাইন দেয়ার ৪ বছর পর কেউ আবার চাকরীতে যোগদান করছেন কিনা আমি জানিনা!  তবে আমি তা করে দেখিয়েছি।” চাকরি রিজাইন দেয়ার পর বেতন ভাতা উত্তোলন করলেন কিভাবে এই প্রশ্ন করা হলে তিনি প্রধান শিক্ষককে দোষারোপ করে বলেন,“ওই টাকাটা হেড স্যার তুলে নিয়েছেন। কিভাবে তুলেছেন তিনিই ভালো জানেন। তবে আমি বেতনের টাকাগুলো  অন্যান্য শিক্ষকদের ভাগ করে দেয়ার জন্য বলেছি। কিন্তু হেড স্যার সবাইকে ঠকিয়েছে। পরে হেড স্যারের পরামর্শে আমি আমার ভাইকে  দিয়ে সিস্টে করে পুনরায় চাকরীতে যোগ দিয়েছি।”
প্রধান শিক্ষক মাহাবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, সহকারী শিক্ষক মাসুমা বেগম  চাকরি রিজাইন দেয়ার পর আমরা অনলাইনে কাগজ পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু অফিস এমপিও থেকে তার নাম কর্তন না করায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের সুপারিশে তাকে যোগদান করার অনুমোতি দিয়েছি।’’
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমুল হাসান বলেন,“সহকারী শিক্ষক মাসুমা বেগম চাকরি রিজাইন দেয়ার পর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাকে তদন্তের জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। তৎকালীন সময়ে কিছু লোক আমাকে ওই শিক্ষকের পক্ষে তদন্ত রিপোর্ট দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন। আমি রিপোর্ট করে কমিটির কাছে জমা দিয়েছি। কমিটি এই রুলস মেইনটেইন করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠাতে পারবে। এই পর্যন্তই আমি জানি।  এর বাইরে যে এত ঘটনা আছে তা আমি জানি না।”
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের বরিশাল অঞ্চলের উপ-পরিচালক মু. আনোয়ার হোসেন বলেন, এ ব্যাপারে অভিযোগ পেয়েছি। পটুয়াখালী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে তদন্ত করার জন্য নির্দেশ দিয়েছি।”